ছবি: ইন্টারনেট |
৩০০ আসনেই প্রার্থী দিবে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুৎ্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: নয়াস্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় আখতার হোসেন এমন কথা বলেন।
২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ এর সদস্য সচিব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। গত সেপ্টেম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে এই প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুৎ্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: নয়াস্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় আখতার হোসেন জানিয়েছেন, যদি ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে। তবে, তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটি সম্ভব হবে, যদি এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রকাশ পায়।
আখতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা এখনও রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠিনি, কিন্তু ছাত্র-তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক এক আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। যদি জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বা প্রকাশ পায় এবং সেখানে আমার কাজ করার সুযোগ থাকে, তবে আমি চেষ্টা করব ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার।” তিনি বলেন, “এটি শুধুমাত্র তরুণদের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি জাতির বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করার জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষ হতে পারে।”
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়েও আখতার হোসেন তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি জানান, তিনি ছাত্ররাজনীতির বিরোধী নন, তবে ছাত্ররাজনীতির নামে যে অমানবিক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অত্যাচার হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তিনি। তিনি বলেন, “আমি ছাত্ররাজনীতির নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে, কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নামে যে দুর্নীতি, অত্যাচার এবং নির্যাতন চলছে, আমি তার কঠোরভাবে প্রতিবাদ করি। আজকের ছাত্ররাজনীতি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।”
এসময় আখতার হোসেন বুয়েটের আবরার হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ছাত্রদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত ছিল। তিনি বলেন, “বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারণ সেখানে ছাত্ররা জানত, তারা কোনো আন্দোলনে অংশ নিলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে ছাত্ররা তাদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।”
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আখতার হোসেন বলেন, একসময় আমিও ছাত্রলীগের হাতে গেস্টরুমে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তিনি জানান, “আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন বড় দাড়িওয়ালা ডিজি’র ছবি ফোনে সেভ করে রেখেছিলাম, যার জন্য আমাকে গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আমাকে নির্যাতন করেছিল। এটাই ছিল ছাত্ররাজনীতির ভয়াবহ চিত্র, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ করেছে।
আখতার হোসেন বলেন, এ ধরনের নির্যাতন এবং অত্যাচারের ফলে ছাত্ররাজনীতি একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থানে চলে গেছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
যদি এখনই ভোট দিয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বই শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের ভোটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাইবে। কারণ তারা অনেকটা ট্রমাটাইজড হয়ে গেছে এবং তারা মনে করে, ছাত্ররাজনীতির জন্য তারা অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছে।
এসময় তিনি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনের মূল কারণ হিসেবে প্রশাসনের ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে আখতার হোসেন বলেন, অনেক সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও, প্রশাসন কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমি বারবার ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি, কিন্তু প্রশাসন কখনোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সবচেয়ে বড় দায় প্রশাসনের, তারা যদি ছাত্ররাজনীতির অসঙ্গতিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
নাগরিক কমিটির এই নেতা ছাত্ররাজনীতির বর্তমান অবস্থান নিয়ে বলেন, এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের উচিত রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া আন্দোলন করা, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে পারে।
ছাত্ররাজনীতির খারাপ দিকগুলো থেকে মুক্তি পেতে একটি সুসংহত পরিকল্পনা প্রয়োজন, এবং এটি কেবল প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্ভব। তিনি ছাত্ররাজনীতির কলঙ্কমুক্ত ভবিষ্যত গড়তে সরকারের প্রতিশ্রুতির দাবি জানান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন