অভাব-অনটন মানুষের জীবন ও চরিত্রে গভীর প্রভাব ফেলে। মানুষের চরিত্রকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেলে এই অভাব অনটন। সমাজে বহুল প্রচলিত প্রবাদ “অভাবে স্বভাব নষ্ট” কেবলমাত্র কথার কথা নয়; বরং এর বাস্তবতাও রয়েছে সমাজের পরতে পরতে। এমনকি অনেক সময় দারিদ্র্য মানুষকে তার ঈমান ও আকিদা থেকেও অনেক দূরে সরিয়ে দেয়। ইসলামে ধনসম্পদ অর্জন বা তার বৃদ্ধি নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং তার যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কুরআন হাদিসের বহু আধ্যায়ে।
ইসলামের সোনালী যুগের মানুষ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের আনেকেই ছিলেন ধনী। তবে ধনাঢ্য জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্ধারিত কিছু নিয়মকানুন মানতে পারলে জীবন হয় সাচ্ছন্দ ও সুখের।
জীবন কল্যাণময় ও রিজিক বৃদ্ধির জন্য ইসলামি জীবনধারায় কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এই বিষয়গুলো মেনে চললে মানুষের জীবনে প্রাচুর্যতা ও অভাবমুক্তি অতি সন্নিকটে।
নিম্নে ইসলামে বর্ণিত সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো:
১. বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা:
ইস্তেগফার মানুষের পাপ মোচন ও অভাব দূর করে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করলে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি এবং বৃষ্টিসহ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু বেশি করে দান করেন। সুরা নুহ-এ বলা হয়েছে,فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً*يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً*وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً
‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন এবং উদ্যান ও নদী দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন।’ (আয়াত ১০-১২)অতি সংক্ষেপে এই ইস্তিগফার দূআটি এভাবে পড়া যায়,
أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
সংক্ষেপে এই ইস্তিগফার দূআটি এভাবে পড়া যায়,
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
নিচে দেওয়া ইস্তাগফারটিও পড়া যেতে পারে,
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'
২. জাকাত আদায় করা:
জাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। এটি দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের জন্য একটি সুসংঘঠিত সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী জাকাত সঠিকভাবে বিতরণ করলে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। কেউ যখন আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান পরিপূর্ণ আদায় না করে আল্লাহ তায়ালা তার রুজিতে বরকত কমিয়ে দেন। তাই ধনী হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করা চাই।আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বলেন,
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
‘জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন (নব মুসলিম) তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত : ৬০)
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা:
রিজিক বৃদ্ধি করার অন্যতম আরেকটি পদ্ধতি হলো, আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জীবিকার উন্নতি ও মৃত্যুর পরে সুনাম রাখতে চায়, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি)৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা:
মহান আল্লাহ রিজিকের একমাত্র মালিক। তিনিই মানুষকে ধনী বানান। তাই তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ছাড়া বিকল্প নেই। নবীজি সাঃ তাঁর উম্মতকে অভাব মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে,اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (আবু দাউদ)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি কুফরি ও দরিদ্রতা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ)
৫. অল্পে তুষ্ট থাকা:
প্রাচুর্যতার পেছনে ছুটে চলা, বড়লোক হওয়ার আশায় সব সময় মত্ত থাকা কখনোই সন্তুষ্টি এনে দিতে পারে না। অন্তরের সন্তুষ্টিতাই প্রকৃত ধনী হওয়ার লক্ষণ। নবীজি বলেছেন, ‘ধনের আধিক্যে ধনী হয় না, বরং প্রকৃত ধনী হলো সেই ব্যক্তি, যার মন তুষ্ট।’ (সহিহ বুখারি)পরিশেষে
তাই ধণী হওয়ার আশায় ডুবে না থেকে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া নিয়ম নীতি মেনে, রিজিকের সন্ধানে নিজের কর্ম মনযোগ সহকারে করলেই কেবল ধনী হওয়া সম্ভব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন