ভারত-বাংলাদেশ সামরিক শক্তি, কে কতোটা পিছিয়ে এগিয়ে?

 

ভারত-বাংলাদেশ সামরিক শক্তি, কে কতোটা পিছিয়ে এগিয়ে?

ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক শক্তির তুলনা আমাদের প্রতিবেশী দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও দুই দেশই নিজেদের সামরিক বাহিনী গঠন ও উন্নত করতে কাজ করছে, ভারতের সামরিক বাহিনীর শক্তি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি, যা তাদের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত বিশ্বে চতুর্থ এবং বাংলাদেশ ৩৭ নম্বরে অবস্থান করছে। তবে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাদের শক্তি ও সক্ষমতার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে, যা পরবর্তীতে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো। 


ভারত-বাংলাদেশের আকাশপথের সামরিক শক্তি 


ভারত এবং বাংলাদেশ—দুটি দেশই তাদের বিমানবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য আধুনিকতা এবং উন্নতি ঘটিয়েছে, তবে ভারতের আকাশপথ সামরিক শক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী।

ভারতীয় বিমানবাহিনীতে ২,২৯৬টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৬০৬টি যুদ্ধবিমান ও ৮৬৯টি হেলিকপ্টার রয়েছে। এর মধ্যে রাফাল, তেজস, সুখোই এসইউ-৩০এমকেআই, মিরাজ ২০০০ এবং আরও আধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে, যা ভারতের আকাশ নিরাপত্তার জন্য খুবই মূলবান শক্তি।


এ তুলনায় বাংলাদেশের মোট ২১৬টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি যুদ্ধবিমান ও ৭৩টি হেলিকপ্টার রয়েছে। ফলে, ভারতীয় বিমানবাহিনী থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও কম শক্তিশালী হলেও, বাংলাদেশ নিজের সীমিত শক্তি দিয়েও আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। 


ভারত-বাংলাদেশের স্থলপথের সামরিক শক্তি 


ভারতের স্থলবাহিনী অনেক বৃহত্তর এবং অনেক শক্তিশালী। তাদের হাতে রয়েছে ৪,৬১৪টি ট্যাঙ্ক, ৭০২টি রকেট আর্টিলারি এবং ১,৫১,২৪৮টি সামরিক যানবাহন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কগুলোতে রয়েছে আধুনিক টি-৯০ ভীষ্ম ও জোরাবর। এই শক্তিশালী বাহিনী দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

বাংলাদেশও একই সঙ্গে শক্তিশালী স্থলবাহিনী গঠন করছে, তাদের হাতে ৩২০টি ট্যাঙ্ক, ৭১টি রকেট আর্টিলারি এবং ১৩,১০০টি সামরিক যানবাহন রয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ভারতে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকলেও, দেশটির সীমিত সম্পদ নিয়ে তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। 


ভারত-বাংলাদেশের নৌপথের সামরিক শক্তি 


ভারতের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তাদের হাতে ২৯৪টি সামরিক নৌযান রয়েছে, যার মধ্যে ১২টি ফ্রিগেট, ১২টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১৮টি সাবমেরিন রয়েছে। তাদের দুটি অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে, যা যুদ্ধবিমান উঠানোর ক্ষমতা রাখে। ভারতীয় নৌবাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী, তাদের হাতে রয়েছে পরমাণু শক্তিধর সাবমেরিনও।


বাংলাদেশও দিনদিন একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরি করছে, তাদের কাছে রয়েছে ১১৭টি সামরিক নৌযান, যার মধ্যে ৭টি ফ্রিগেট, ৫৫টি প্যাট্রোল ভেসেল এবং ২টি সাবমেরিন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নৌপথের নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, তবে ভারতের তুলনায় তাদের শক্তি অনেক কম বলা চলে। 


সামরিক শক্তির সম্মিলিত পর্যালোচনা 


ভারত এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর শক্তি একত্রে দেখলে, পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে ভারতের শক্তি আকাশ, স্থল ও জলপথে অনেক বেশি। ভারতের হাতে আধুনিক যুদ্ধবিমান, শক্তিশালী ট্যাঙ্ক, পরমাণু অস্ত্র ও শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে, যা দেশের সামরিক সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী, তবে তাদের শক্তি সীমিত এবং ভারতের তুলনায় ছোট। তবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী নিজেদের শক্তির পরিসর বাড়ানোর জন্য কাজ করছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে। 


ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী দুটি আলাদা স্তরে হলেও, একত্রে তাদের শক্তির সমন্বয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের শক্তি যেখানে বিশ্বমঞ্চে প্রধান ভূমিকা পালন করছে, সেখানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন