শরীফ মুহাম্মদ, একটি নাম যা বাংলাদেশের মিডিয়াঙ্গন ও ইসলামী জগতের অজস্র আলোকিত পথিকৃৎ। একাধারে তিনি একজন গুণী আলেম, লেখক, এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু দেশের সীমানা নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল, নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া শরীফ মুহাম্মদ বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের মাঝে সঠিক ধারার ইসলাম প্রচারের জন্য কাজ করছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে লেখালেখি করেন, যেগুলো হলো— আবু তাশরীফ, ওয়ারিশ রাব্বানী এবং খসরু খান।
শরীফ মুহাম্মদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল জামিয়া ইসলামিয়া ময়মনসিংহে নুরানি বিভাগে, এরপর তিনি কিশোরগঞ্জের জামিয়া নুরিয়া বাগে জান্নাত মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে তিনি জামিয়া নুরিয়াতে ভর্তি হন, যেখানে তার শিক্ষক ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)। ১৯৯২ সালে তিনি দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন জামিয়া কোরআনিয়া লালবাগ মাদরাসা থেকে।
এত বড় একজন আলেম হলেও, মিডিয়ায় তার আগমন ছিল এক অনন্য ঘটনা। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি ছিল তার নেশা। ১৯৯২-৯৩ সালে মাদরাসা পড়ানোর পাশাপাশি তিনি মুসলিম জাহান পত্রিকায় যাতায়াত শুরু করেন এবং সেখানে কিছু কাজ করেন। এরপর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। লেখালেখির প্রতি আগ্রহ এবং মিডিয়ায় কাজ করার স্বপ্ন তাকে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শরীফ মুহাম্মদ বলেন, “শুরুতে লেখালেখি ছিল শুধু একটি শখ, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তবে, তিনি কখনোই একমুখী ভাবনা দিয়ে জীবন কাটাননি। তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ‘সবুজ গম্বুজের ছায়া’, ‘ইতিহাসের লাল আস্তিন’, ‘জীবনের নানা রঙ’ এবং ‘পত্রিকায় লেখালেখি: প্রস্তুতি ও কলাকৌশল’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, তিনি মাসিক আল কাউসার, যমযম, মুসলিম জাহান পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন এবং হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) স্মারকগ্রন্থ, মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.) স্মারকগ্রন্থ এবং আল্লামা গহরপুরী (রহ.) স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।
শরীফ মুহাম্মদ কখনও মিডিয়া ও ইসলামকে আলাদা হিসেবে দেখেননি। তিনি বিশ্বাস করেন, ইসলামের প্রচারে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যাণ্ড দাওয়াহ-এর পরিচালক হিসেবে তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করছেন। তার মতে, “ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি দাওয়াহ, আর দাওয়াহ পরিচালনায় মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।”
শরীফ মুহাম্মদের জীবনে এমন অনেক কিছু রয়েছে যা তিনি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেননি, যেমন নিজস্ব স্টাইলে হক্কানি আলেমদের প্রভাবযুক্ত দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্ন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এটি পূর্ণ হতে পারে, ইনশাআল্লাহ।
এখনো তিনি যে কাজগুলো করছেন, তা তার জীবনের মূল লক্ষ্যকে প্রকাশ করে— ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে তার পথচলা থেমে থাকবে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন