ছবি: ইন্টারনেট |
সম্প্রতিকালে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল সমুদ্র বিজ্ঞানীরা এমন একটি মাছের সন্ধান পেয়েছে, যা পানি ছাড়াও বেঁচে থাকতে সক্ষম। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া মাছটি দেখতে অনেকটা সাপের মতো, আর এই মাছটির নাম snakehea Fish “স্নেকহেড ফিশ”। মাছটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৮ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে এবং এই মাছের রয়েছে ধারালো সব দাঁত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছটির শারীরিক গঠণপ্রনালী এমন যে তারা পানি ছাড়াও অনায়েশে বেঁচে থাকতে পারে। এর মানে, মাছটি যদি কোনো কারণে নদী কিংবা জলাশয় থেকে ভুলে বেরিয়ে আসে, তাহলে মাছটি ডাঙাতে বা শুকনো মাটিতেও মানুষের মত মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মাছটি এখনোই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু জায়গায় ধরা পড়েছে।
১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো এই মাছটি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলভার হুড লেকে ধরা পড়ে। এরপর, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার লেকসহ সেখানকার বেশ কিছু লেকে ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। স্নেকহেড নামের এই ভয়ংকর মাছটি যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার পর বিজ্ঞানীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মাছটি দেখতে সাধারণ মাছের মতো হলেও অন্যসব মাছ সহজেই শিকার করে খেয়ে ফেলতে পারে এই স্নেকহেড। এমন কি এই মাছটি পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এই মাছটি দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের টাকি মাছের মতো।
এই স্নেকহেড মাছটির বিশেষত্ব হলো, এর শ্বাসযন্ত্র এমনভাবে গঠিত যে এটি মানুষের মতো বাতাস থেকেও শ্বাস নিতে পারে। যার ফলে এটি অন্য মাছের মতো শুধু জলেই নয়, বরং ডাঙাতেও বেঁচে থাকতে পারে। মাছটি দেখতে সাপের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে স্নেকহেড ফিশ। মাছটির ধারালো দাঁত ও তীক্ষ্ণ শিকারী গুণের কারণে এটি অন্যান্য সব মাছের কাছে এক আতংকের নাম।
ছবি: ইন্টারনেট |
বাংলাদেশেও এই ধরনের মাছ ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গঙ্গা, মেঘনা, পদ্মা কিংবা অন্যান্য নদীতে স্নেকহেড ফিশের উপস্থিতি যদি দেখা যায় তাহলে সেটি হবে বড় বিপদের কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের গঙ্গা নদীতে অ্যামাজন নদীর কিছু মাছ ধরা পড়ে, এর পর বিজ্ঞানীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তারা মনে করছে যে, সেসব মাছের মতো স্নেকহেড ফিশও ভারত বাংলাদেশের নদীগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। তাতে নদী বৈচিত্র যেমন নষ্ট হবে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও সমান ভাবে নষ্ট হবে বলে মনে করছে বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে সতর্ক করেছেন। তারা ঘোষণা করেছে, যদি কোথাও স্নেকহেড ফিশ পাওয়া যায়, তবে সেটি যেন তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলা হয়। কারণ এই মাছটি শক্ত অবস্থানে বেঁচে থাকতে পারার কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে
বিজ্ঞানীদের মতে, স্নেকহেড ফিশের বিষয়ে যত দ্রুতম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ততই ভালো। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্নেকহেড ফিশ ধরা এবং এই মাছটি বিক্রি করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কারণ এই মাছটি পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মাছটির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
ছবি: ইন্টারনেট |
এই মাছটির শিকার করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যদি মাছটির সম্পর্কে না জেনে শিকার করতে যায় তবে তারা এটিকে সহজভাবে ধরতে গিয়ে বিপদেও পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, যদি এ ধরনের মাছ কোথাও দেখতে পাওয়া যায়, তবে সেটি তৎক্ষণাত মেরে ফেলতে হবে, যাতে করে এটি জলাশয় বা খালবিল কিংবা নদীগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে না পারে।
লেখা: শাফায়াত রাকিব
শিক্ষার্থী, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন