চুল হলো নারীর ভূষণ। সুন্দর চুল ছাড়া কোন রূপসী নারী যেন চিন্তাই করা যায় না। তাই নিজেকে সুন্দর দেখাতে আমরা সবাই চাই চুলকে সুন্দর করতে, চুলের যত্ন নিতে। কিন্তু অনেক অজানা কারণেই চুলের সেই যত্নকরা আর হয়ে ওঠে না। তাই আজেকের এই আর্টিকেলে আমরা কিছু নির্দিষ্ট টিপস জানবো যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সহজেই চুলের যত্ন নিতে পারবো। তাহলে চলুন চুলের যত্নে আমরা কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি তা পালাক্রমে জানা যাক:
১. চুলকে সব সময় সুরক্ষিত রাখুন
সবসময় চেষ্টা করা উচিত চুলকে সূর্যের কঠিন আলো, কড়া রোদ, ভারি বৃষ্টি থেকে সুরক্ষিত রাখার। সূর্যের কড়া রোদ, তাপ-উত্তাপ, ধুলোবালি এগুলো চুলের দুর্দশা ডেকে আনে।
ধীরে ধীরে ওসব জমাট বাঁধতে শুরু করে চুলের গোড়াতে। ফলাফল, শুরু হয় চুল পড়া চুল ফাটা । তাই চুলের যত্ন নিতে এবং এ সকল ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে খোলা আকাশে রোদ কিংবা বৃষ্টিতে চলাচলের সময় ছাতা অথবা ক্যাপ পড়া একান্ত কর্তব্য ।
বাড়িঘরের নানাবিধ কাজের ফাকে যদি এসব উপাদান আপনার পাশে না-ও থাকে তবে কাপড়, গামছা কিংবা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখলেও অনেকাংশেই চুল পড়া, চুল ফাটা বা চুলকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
২. ভেজা চুলকে সাবধানে ট্রিট করুন, আস্তে নাড়াচাড়া করুন
ভেজা অবস্থায় চুল সবথেকে ভঙ্গুর থাকে। ভেজা থাকাকালীন চুলের গোড়া থেকে চুল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাই শ্যাম্পু করা বা মাথা ধুয়ামুছার সময় চুলে বেশি পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করা একেবারেই অনুচিত।
এছাড়াও গোসল করার পরপরই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোই আপনার চুল গোড়া থেকে আলতো করে ওঠে আসতে পারে তাই গোসলের পর বা ভেজা চুলে চিরুনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. চুলে সঠিক নিয়মে শ্যাম্পু করুন
বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হলে চুলে প্রচুর পরিমাণে ধুলোবালু আর ময়লা জমে থাকে। তাই, ময়লা চুল পরিষ্কারের জন্য চুলের ধরন বুঝে ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন । অনেকেই কম দামে প্যাকেটজাত শ্যাম্পু কিনে দেদারসে চুলে ব্যবহার করে। ফলে, ওসব শ্যাম্পু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো নকল শ্যাম্পু হওয়ায় চুলের গোড়া শক্ত হওয়ার বিপরীতে চুল ঝড়ে যায় কয়েক দিনেই। তাই নকল শ্যাম্পু ব্যবহারে শতর্ক থাকুন।
শ্যাম্পু করার সময় ভালো করে আলতো বাবে মাসাজ করুন। চুলে বেশি পরিমাণ ময়লা থাকলে দুইবার শ্যাম্পু করুন। চুলের গোড়ায় ময়লা থাকলে ত্বককে নষ্ট করে চুল ঝড়ে যায় অনায়সেই। তাই, সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন।
৪. নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
প্রতিদিন গোসল অথবা চুল ধোঁয়ার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে করে চুল হয় মসৃন ও ঝরঝরে ফলে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। তাই কন্ডিশন করতে কখনো যেন ভুলে না যান।
৫. সঠিকভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
চুল মজবুত করার জন্য চাই সঠিক ভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করা। কন্ডিশনারের কাজই হলো চুলকে মসৃন রাখা, তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় তা চুলের গোড়া হতে অন্তত এক ইঞ্চি উপর থেকে ব্যবহার শুরু করা উচিৎ। অনেকেই চুলার আগাগোড়া কন্ডিশনার দেয়—এটা ভুল পদ্ধতি। এছাড়া ফলপ্রসূ ফয়দা পেতে অতিরিক্ত পরিমানে কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৬. একই ধরণের বা একই কোম্পানির হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে একই কোম্পানির যথাযথ উপাদানে তৈরি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। আজ এই কোম্পানির শেম্পু তো কাল ওই কোম্পানির বানানো কন্ডিশনার এমন মনচাহি পণ্য ব্যবহারে চুলের ত্বক অবজারভেশন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে চুলের যত্নের ক্ষেত্রে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে না পেরে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখায়। যার দরুন আপনার উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তাই ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির তৈরিকৃত ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার প্রবনতা থেকে বেরিয়ে আসুন। এতে কোন রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার চুলের যত্ন নিতে পারবেন সহজেই।
৭. চুলে অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
যেকোন ধরণের তাপ চুল ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার জন্য দায়ী। তাই চুলে হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
অতিরিক্ত হিটের ফলে চুল জ্বলে যেতে পারে তাই ব্লোয়ার, আয়রন অথবা চুল স্ট্রেটনার যদি ব্যবহারও করতে হয় তাহলে খুব সাবধানতার সাথে তা করতে হবে।
৮. চুলে লেগে থাকা পানি দূর করতে তোয়ালে ব্যবহার করুন আলতোভাবে
অনেকেই গোসল শেষে চুল মোছার সময় খুব চাপ প্রয়োগ করে চুল মুছে থাকে। অনেকেই তো আবার কোন কিছু দ্বারা বারি দিয়ে চুল থেকে পানি সরায়। এতে এক চুল আরেক চুলের সাথে বারংবার ঘর্ষণের ফলে চুল তার নিজস্বতা হারিয়ে গোড়া থেকে ভেঙে যাওয়ার আশংকা থাকে।
তাই চুল মোছার সময় যতটা সম্ভব আলতোভাবে মুছুন ।
৯. আঁটসাঁট বেণী বাধাঁ বাদ দিন
ঘুমানোর আগে আমার অনেকেই শক্ত করে বেণী বাধিঁ। এমনটা না করাই ভালো। এতে চুল একসাথে থাকবে কিন্তু চুলের গোড়ায় টান লেগে চুল উপড়ে যেতে পারে মূল থেকে তাই সাবধান থাকুন এমন করাতে। বেশি প্রয়োজন হলে আটঁসাঁট করে না বেধেঁ হালকা করে বাধুঁন।
১০. ভালো কাপড়ের বালিশ কভার ব্যবহার করুন
আমরা অনেকেই ছোটখাটো জিনিস গুলো চিন্তা করি না। কিন্তু ছোট্ট জিনিস থেকেই সব সময় আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে থাকে। বালিশের কাভার ছোট্ট বিষয় হলেও চুলের যত্নে এর থেকে সাবধান থাকার বিকল্প নেই। আপনি যে বালিশের কাভারে রাতে ঘুমাচ্ছেন সে কাভার যদি কর্কশে কাপড়ের হয় তাহলে সেই বালিশের কাভার আপনার চুলকে আটকে ধরতে পারে ঘুমের ঘরে। আর নিজের অজান্তেই টান লেগে ছিড়ে যেতে পারে আপনার চুল তাই চুলের যত্ন নিতে চাইলে ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত বালিশের কাভার ব্যবহার করুন।
১১. নিয়মিত চুলে তেল দিন
নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহারে শক্ত হয় চুলের গোড়া । তবে তা যেন আবার অতিরিক্ত হয়ে গিয়ে আপনার সাজোগোজোকে নষ্ট করে না ফেলে। তাছাড়া অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে তা দূর করতে ব্যবহার করতে হবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু যা চুলের জন্য এবং আপনার পকেটের অবস্থার জন্য তেমন ভালো বিষয় নয়।
১২. হট অয়েল মাসাজ করুন
চুলের পুষ্টি যোগাতে, চুলকে সতেজ রাখতে হট অয়েল মাসাজ খুবই কার্যকরি। সপ্তাহে অন্তত একবার এটি করলে আপনার চুল থাকবে সুন্দর। মাথাইয় সিঁথি কেটে আলতো করে মাথার চামড়ায়, চুলের গোড়ায় নিয়ম করে ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল, অথবা অলিভ অয়েল একসাথে করেও ব্যবহার করতে পারেন।
১৩. প্রাকৃতিক হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন
ঝলমলে চুলের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন টকদই, আমলা পাউডার বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের স্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
১৪. চুলের যত্নে হেয়ার ব্রাশিং
নিয়মিত চুল ব্রাশ করা বা চুলো আচড়ানো চুলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে থাকে। তাই ঝলমলে চুলের জন্য দিনে ২-৩ বার ব্রাশ করা তো যেতেই পারে।
১৫. চুল পরিষ্কার করতে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন
চুলে গরম পানি ব্যবহারের ফলে চুলের আর্দ্রতা বহুগুণে কমে যায় এবং চুলের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই চুল পরিষ্কার করতে, মাথা ধুতে সবসময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
১৬. চুলে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
আপনার চুলে হেয়ার স্প্রে, জেল বা চুলের স্টাইলিং করাতে যেসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলো কম ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে ওসব ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
১৭. নিয়মিত হেয়ার ট্রিম করুন
চুলের যত্নে নিয়মিত হেয়ার ট্রিম করা খুবই জরুরি। হেয়ার ট্রিম হল চুলের আগার অল্প পরিমাণ আংশ কেটে দেওয়া। এটি চুলের ফেটে যাওয়া রোধ করে।
১৮. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
সুস্থ চুল তখনই হবে যখন আপনার শরীর সুস্থ্য থাকবে। তাই স্বস্থকর চুলের জন্য নিয়মিত প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। এতে চুলের বৃদ্ধি যেমন ভালো হবে তেমনি আপনার শরীরও সুস্থ থাকবে।
১৯. চুলে ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
চুল শুকানোর জন্য কৃত্তিম যন্ত্রের সাহায্য নেয় অনেকেই। এটি এড়িয়ে চলুন। যেমন ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করলে চুলের কোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চুলের কোষ নষ্ট হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এটি ব্যবহার করলে খুব সাবধানতার সাথে ব্যবহার করুন।
২০. গরমে ধুলাবালি থেকে চুলকে রক্ষা করুন
গরমে রাস্তায় ধুলাবালি বেশি উড়ে তাই বাইরে বের হওয়ার সময় চুলকে ধুলোবালি থেকে সুরক্ষিত রাখুন। আর এর জন্য ছাতা অথবা ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
২১. চুলে হেয়ার স্পা নিন
চুলের ক্ষতি কমাতে মাসে একবার বা দুইবার হেয়ার স্পা নেওয়া ভালো। হেয়ার স্পা এমন একটি হেয়ার ট্রিটমেন্ট, যার মাধ্যমে নিষ্প্রাণ শুষ্ক চুল নতুন উদ্যমে উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়ার শক্তি পায়। এটি চুলকে হাইড্রেটেড রাখে। এবং হেয়ার স্পা করার দ্বারা চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এমন কি চুলের পুষ্টি সরবরাহ এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।
২২. চুলের জন্য বালম বা মাস্ক ব্যবহার করুন
ঝলমলে, মসৃন এবং সুস্থ চুলের জন্য বাজারে অনেক ধরনের হেয়ার মাস্ক বা বাল্ম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। এটি আপনার চুলের জট পাকানো কমিয়ে দিয়ে চুলকে নরম রাখতে সহায়তা করবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন