শীতে হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা? কোন রোগে ভুগছেন নাতো?

শীতে হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা? কোন রোগে ভুগছেন নাতো?

শীত এলে হাত-পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়া একটি কমন সমস্যা, কিন্তু অনেকের জন্য এটি একটি ভয়ের    বিষয়ও হতে পারে। শীতের মৌসুমে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে তা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কেন আসলে এমনটা হয়ে থাকে?

কিভাবেই বা হাতে পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? 
যে কোন সমস্যার মোকাবেলা করা তখনই সম্ভব যখন আমরা জানত পারবো সে সমস্যার মূল কারণ আসলে কী। তাই  ঢাকা নিউজের স্বাস্থ্য টিপসে আজ আমরা জানবো, শীতে হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার কারণ কি কি? এবং শারীরিক কোন কোন রোগব্যাধির ফলে আমাদের হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।

কেন হাত-পা ঠান্ডা হয়?

১. রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা

আপনার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হতে পারে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা। যখন শিরা-উপশিরাগুলোতে রক্ত সরবরাহ কম হয়, তখন বাহ্যিক অঙ্গ, বিশেষ করে হাত ও পা, বেশি পরিমাণে  ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা মূলত হার্টের কার্যকারিতার সাথে সম্পর্কিত।  বিশেষ করে আপনার হার্টে কোন রোগ বা রক্তনালীতে কোন রকম সমস্যা থাকলে, হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার  এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।

২. হার্ট সমস্যার প্রভাব

আপনার হার্টের ভেতর রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে না হলে শীতে হাত পা স্বাভাবিক থেকে অতিরিক্ত  ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া আপনার হার্টের দুর্বলতা, কিডনিজনিত সমস্যার কারণে শরীরে  রক্ত প্রবাহ কমে গেলে হাত-পা ঠান্ডা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মেডিকেল পরীক্ষা এবং ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা

থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক অবস্থা ভেঙে পড়লে, অর্থাৎ  থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা না হলে রক্ত চলাচলে  সমস্যা সৃষ্টি করে,  যার ফলে আপনার  হাত-পা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।

৪. আয়রনের ঘাটতি

আয়রনের অভাব হলে শরীরে  রক্ত চলাচল দুর্বল হয়ে পড়ে, যা হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার অন্যতম কারণ। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।

৫. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা 

আপনি যদি  দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন কিংবা কোন দুশ্চিন্তায় ভুগেন তাহলে সেই মানসিক চাপ আপনার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-কোষে রক্ত সরবরাহে বিঘ্নতা তৈরি করে আপনার হাত-পা অতিরিক্ত ঠান্ডা করে দিতে পারে। কারণ শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে না হলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট হয়।

হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া থেকে যেভাবে বাঁচবেন

১. রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে ব্যায়াম করুন

আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক বা তারচেয়ে  উন্নত করতে প্রতিদিন যোগ-ব্যায়াম বা শরীরের সব অঙ্গ নাড়াচাড়ায় থাক এমন সকল ব্যায়াম নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় প্রতিদিন করুন। এটি আপনার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। এবং আপনাকে সুস্থ্য রাখবে দীর্ঘদিন।

২. পর্যাপ্ত পুষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন

হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার জন্য আপনার শরীরের পুষ্টি-অভাব অনেকটাই দায়ী। আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: পালংশাক, কলা, ডিম, দুধ এসব খাদ্য আপনার খাবার মেনুতে রাখুন। এসব খাবার নিয়মিত খেলে আপনার শরীর যেমন আয়রন, প্রোটিনের ঘাটতি থেকে বাঁচবে তেমনি আপনার হাত-পাকে  ঠান্ডা হয়ে যাওয়া থেকেও বাঁচবে। 

৩. থাইরয়েড পরীক্ষা করুন

থাইরয়েড  সমস্যা আছে কিনা জানতে  থাইরয়েড টেস্ট করাতে পারেন। যদি এমন সমস্যা পরীক্ষিত ভাবে জানতে পারেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোনজনিত চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না। কারণ সমস্ত সুখের মূল হল স্বাস্থ্য।  এটিকে সব সময়-ই প্রাধান্য দিন।

৪. ব্লাডপ্রেশার এবং হার্ট পরিক্ষা করুন

আপনার শরীরের  রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক এবং হার্টের কর্যক্রম ঠিকঠাক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। হার্ট দুর্বলতার কারণে রক্ত চলাচল অ-স্বাভাবিক হয়, ফলে হাত পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষানিরীক্ষার পর কোন রোগব্যাধি ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।

৫. মানসিক চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

 মানসিক চাপ সকল মানুষের ই কমবেশি থেকেই থাকে। তবে এই চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং প্রাকৃতিক যেকোন ধরণের  সুস্থ সুন্দর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় সহজেই। 

চিকিৎসকের পরামর্শ

হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো সমস্যা নয়, তবে এই ঠান্ডা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সাথে যুক্ত থাকলে তা অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর এই ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন মেডিকেল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, পুষ্টি গ্রহণ এবং জীবনযাপনের জন্য ডাক্তারের বলে দেওয়া নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমেই কেবল এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


হুমায়রা তাসবিহ আফিফা

শিক্ষার্থী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন