৪ আগস্ট। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন তখন রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশে পৌছে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলেছে দমন-পীড়ন। তবে কিশোরগঞ্জের অবস্থা তখনও উল্টো। শহরের সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখলে নিয়ে কর্মসূচি পলন হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিদিন কর্মসূচি শেষে সমাবেশ করে আরও বেশি লোকসমাগমে উদ্বুদ্ধ করছে জেলা সমন্বয়করা। যেকোন সময় ঘোষণা হতে পারে এক দফা–তাই স্কুল, কলেজ,মাদরাসা ও সাধারণ জনতাকে একীভূত করার সব রকম প্রয়াস চালানো হয়েছে। সফলও হয়েছে সেসব প্রয়াস-প্রচেষ্টা।
শতসহস্র কলাকৌশল আর নির্মমতার সাক্ষী জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে স্বৈরশাসকের শাসন থেকে রেহায় পেয়ে সবার দুঃখ, গ্লানি মুছলেও মাদরাসা শিক্ষার্থী সাইফুলের দুঃখ গুঁজার ঠাঁই নেই। মাথায় আটকে থাকা ছররা গুলির বিষম ব্যথা আর পারিবারিক আসচ্ছলতার গ্যাঁড়াকলে জীবনের সব স্বাদ যেন মাটি হয়ে গেছে। ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের কাঁচালঙ্কা রেস্টুরেন্টের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন মাওলা আব্দুস সাত্তার মাদানী (রহঃ) দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর (দাখিল) শিক্ষার্থী মোঃ সাইফুল্লাহ। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সাতটি ও মাথায় দুটি ছররা গুলি লেগে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে জ্ঞান হারান। পরে শহরের জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার এক ছাত্র তাকে একটি বাসায় নিয়ে গেলে বাসায় থাকা লোকজন পানি ঢেলে স্বাভাবিক করেন।
আন্দোলন পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এক প্রাইভেট হাসপাতাল হতে শরীরের ছররা গুলি বের করতে পারলেও টাকার অভাবে মাথায় আটকে থাকা গুলি বের করতে পারছে না সাইফুলের পরিবার।
সাইফুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলা, সদর থানার নোয়াপাড়া এলাকায়। তার পিতার নাম মোঃ আলাল উদ্দীন। তার পরিবারে এক বোন, তিন ভাই ও মা আছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাইফুলের বাবা ৪ বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান। বড় ভাই প্রবাসে থাকলেও পরিবারের কোন খোঁজখবর রাখেন না। মানুষের বাসায় কাজ করে সাইফুলের পুরো পরিবার চালান তার মা।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক ইকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আন্দোলনে আহত হয়েছে তাদেরকে ফরম ফিলাপ করে সরকারী অর্থায়ণে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আমরা সকল হাসপাতালে ব্রিফিং করেছি এবং সকল থানায় সে খবর পৌছে দিয়েছি। তারপরও যদি কেউ চিকিৎসা গ্রহণের ফরম ফিলাপ না করে থাকে তাহলে এখনো সময় আছে। দ্রুত ফরম ফিলাপ করলে আমরা সব ধরণের সহায়তা করবো।
তাছাড়া মন্ত্রনালায় থেকে যাদেরকে আহত-নিহত জড়িপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা সমন্বয় করে কাজ না করার ফলে এমন সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আশরাফ আলী সোহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাইফুল ও তার এক বড় ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমি তাদের কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। সাইফুলের সকল চিকিৎসা খরচ ও অনুদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন