মানবজাতি মহান আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম সৃষ্টি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া থাকায় মানুষের প্রতি আল্লাহর স্নেহ ও মায়-ও অপরিসীম। তাই পবিত্র কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব এবং এর বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেছেন, যাতে করে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ ক্ষমা পেয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে যেতে পারে। আর আল্লাহ তায়া’লার নিকট ক্ষমা প্রার্থনার অন্যতম সেরা আমল হলো সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার। অনেকেই নানাভাবে জানতে চান যে, সবচেয়ে বড় ইস্তেগফার কোনটি? অনেকেই আবার জিজ্ঞেস করেন বড় তাওবা কিভাবে করবো? তাই আজ এ নিয়েই চলুন জানা যাক। তার আগে চলুন যেনে আসি:
ইস্তেগফার কী?
ইস্তেগফার এর অর্থ হলো: মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের জীবনের সকল ভুল ও পাপের জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর এই ইস্তেগফারের মাধ্যমে বন্দা আল্লাহর খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ পায় । তাই আমাদের নবী, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইস্তেগফার করার কথা বার বার বলেছেন। উম্মতকে ইস্তেগফারের শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও প্রতিদিন বারবার তা পাঠ করেছেন।
সহজ ইস্তেগফার কোনটি?
মুসলমানদের মধ্যে বহুল প্রচলিত এবং সবচেয়ে সহজ একটি ইস্তেগফার হলো:
أَسْتَغْفِرُالله
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল ফরজ নামাজের পর এই ইস্তেগফার তিনবার পাঠ করতেন। (মিশকাত শরীফ, হাদিস: ৯৬১)
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্তেগফার হলো:
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার কি? – সর্বশ্রেষ্ঠ তাওবা কোনটি?
আমাদের শেষ নবি মুহাম্মদ (সা.) সাইয়্যিদুল ইস্তেগফারকে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেগেছেন। আর এই সায়্যিদুল ইস্তেগফার হলো:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার সঙ্গে করা অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা পালনের চেষ্টা করি। আমার কৃত পাপের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার প্রদত্ত অনুগ্রহ স্বীকার করি এবং আমার পাপের কথাও স্বীকার করি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তোমার ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
সাইয়্যিদুল ইস্তেগফারের ফজিলত ও গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরে পূর্ণ বিশ্বাস ও বিনম্র হৃদয়ে সকাল (ফজরের নামাজের পর) ও সন্ধ্যায় (আসর বা মাগরিবের নামাজের পর) সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে, সে যদি ঐ দিন মৃত্যু বরণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ বুখারি, তিরমিজি)
ইসলামিক স্কলারের পরামর্শ
ইস্তেগফার বা তাওবা আমাদের জীবনের সকল পাপ ও ভুল থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং তাঁর রহমত লাভের অন্যতম পন্থা । তাই প্রতিদিন নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে। পাপতাপ থেকে মুক্তি মিলবে ইনশা আল্লাহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন