পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের বিস্ময়কর কিছু তথ্য যা আপনি জানেন না

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী এবং তার বাইরের সুবিশাল  মহাবিশ্বে প্রতিনিয়তই এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যা সত্যিই অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় । বিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতির মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলেও , এখনও অনেক অজানার রহস্য আমাদেরকে প্রতিনিয়তই বিষন্ন ও বিস্মিত করে রাখে । ঢাকা নিউজের  আজকের প্রতিবেদনে  পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য উঠে আসবে, যা  আপনি আগে জানতেন না। যা আপনাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। তাহলে চলুন ভেদ করি অজানা সব রহস্যের দোয়ার: 


১. আমরা সবাই অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটে চলছি প্রতিনিয়ত 

আপনি জানেন? পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণন করার পাশাপাশি সূর্যের চারপাশ ধরে প্রতি ঘন্টায় ৬৬,০০০ মাইল দ্রুত গতিতে ঘুরছে। শুধু এখানেই শেষ নয়। আমাদের এই পুরো সৌরজগত প্রতিনিয়তই ছুটে চলছে প্রতি ঘন্টায় ৫,৬০,০০০ মাইল গতি বেগ নিয়ে । এমন গতির তুলনা করা বা মাপা এসব তো দূরের কথা এটার কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে কঠিন। অথচ আমরা প্রতিদিন,  প্রতি সময় এমনকি প্রতি সেকেন্ডে এই অভূতপূর্ব গতিতে ছুটে চলছি, তা আমরা টেরও পাচ্ছি না। বুঝতে পারছি না যে, আমরা এত দ্রুতগতির ভেতর দিয়ে জীবনযাপন করছি।

এটির সম্ভব কারণ এমন হতে পারে,  মহাবিশ্বের সবকিছু,  যা আমরা দেখি বা দেখি না এ সকল পরিমন্ডল একসঙ্গে চলমান, সেই সাথে আমাদের চারপাশের সুন্দর পরিবেশও। ফলে এই দ্রুত  গতির প্রভাব আমরা অনুভব করতে পারি না। 

২.মহাসাগরের অজানা রহস্য

আমাদের পৃথিবীর ৭১ শতাংশ জায়গা  জুড়ে রয়েছে মহাসাগর। যা পানি দ্বারা পূর্ণ। সেই সাগরের ভেতর রয়েছে অগণন প্রানি প্রজাতি।  অথচ আমরা বিজ্ঞানের সাহায্যে এখনও পর্যন্ত  মাত্র ৫% মহাসাগর আবিষ্কার করতে পেরেছি। সেই তুলনায় আমরা চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বেশি তথ্য জানি।

মহাসাগরের অতল গভীরে এমন অনেক রকম রহস্য রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা আজ-অব্দি  খুঁজে বের করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, গভীর সাগর জগতে  এমন কিছু জাতের প্রাণী রয়েছে, যারা সম্পূর্ণ অন্ধকার পরিবেশে জীবনযাপন করে।  তাদের কাছে কোনরকম সূর্যের আলো পৌঁছায় না। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন ওই প্রানিগুলো নিজেদের আলোর উৎস  নিজেরাই তৈরি করে নেয়। এই উদহারণ আমাদেরকে জানান দেয় যে, প্রকৃতি কতটা বিস্ময়কর। কতটা রহস্যময়। 

৩. পৃথিবী ৫টি বড় সংকট পার করেছে

পৃথিবী এর আগে ৫টি বিশাল বড় বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যে  আমূল  এক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তার মধ্যে: 

  • প্রথম সংকট ঘটে প্রায় ৪৪৪ মিলিয়ন বছরেরও পূর্ব, যে সময় পৃথিবীতে বসবাস করা ৮৬% প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

  • দ্বিতীয়টি ৩৭৫ মিলিয়ন বছর আগে ঘটেছে, যা মূলত সমুদ্রের প্রাণীগুলোকে বিনষ্ট করেছে। সে সময় সমুদ্রে থাকা অনেক প্রজাতির উদ্ভব নষ্ট হয়েছে।

  • সবচেয়ে বড় বিলুপ্তি ছিল ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে, যা পৃথিবীর প্রায় ৯৬% জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়।

  • এগুলোর পর আরও দুটি বড় সংকট আসে, যার মধ্যে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির সংকট অন্যতম।

তারপরও, মানুষ আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। আর এই টিকে থাকাই প্রমাণ করে যে, প্রকৃতি বারবারই তার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করে গেছে। তারমধ্যে মানুষ বা মানবজাতি অন্যতম।

৪. মহাকাশে গেলে আপনি কত মিনিট বেঁচে থাকবেন জানেন?

কেউ যদি মহাকাশে কোন ধরনের সুরক্ষা ছাড়া চলে যায় তাহলে সে মরবে না। আমাদের মহাকাশে সুরক্ষাহীন অবস্থায় কোন মানুষ জীবিত টিকে থাকা খুবই কঠিন। কেউ যদি মহাকাশে কোনরকম সুরক্ষা ছাড়াই বেরিয়ে পড়ে, তবে সে তাত্ক্ষণিক ভাবে মারা যাবে না। তবে সে আজীবন বেঁচেও থাকতে পারবে না। সুরক্ষা ছাড়া একজন মানুষ মহাকাশে বড়জোর দুই মিনিট বেঁচে থাকতে পারবে। এর কারণ:

  • মহাকাশের শূন্য পরিবেশে অক্সিজেনের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। যা একজন মানুষকে বাচিয়ে রাখতে সামর্থ্য হবে না।

  • এবং মহাকাশে  রয়েছে তীব্র ঠাণ্ডা, যা শরীরকে দ্রুত হিমায়িত করে ফেলে। ফলে মানবজাতির কেউ যদি ওখানে সুরক্ষা ছাড়া চলে যায় তাহলে সে অতিরিক্ত  ঠান্ডায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। 

  • এছাড়াও, মহাকাশের শূন্যচাপের ফলে মানুষের শরীরের রক্তের চাপও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৫. পৃথিবীতে “২৪ ঘন্টায় ১ দিন” এমন কোন হিসেব নেই

ক্যালেন্ডারের পাতায় যুগের বিচার বছর,  বছরের বিচার মাস, মাসের বিচার দিন, আর দিনের বিচার বা হিসেব হয় ঘন্টায়, এটা  আমরা সবাই জানি। এবং আমরা এটাও জানি যে ২৪ ঘন্টায় ১ দিন হয়।  কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে সময় নেয় ২৩ ঘন্টা, ৫৬ মিনিট এবং ৪ সেকেন্ড। ২৪ ঘন্টা নয়।

তাহলে আমরা একে ২৪ ঘন্টা বলি কেন?
মূলত এমনটা আমরা বলে থাকি  সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। আর তা গণনার সহজ পদ্ধতির জন্যে বলা হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য গ্রহে দিনের পরিমাণ আরও বড় বা ছোট হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • মঙ্গল গ্রহে একটি দিন পৃথিবীর তুলনায় ২৪ ঘন্টা ৩৭ মিনিট বড় ।

  • আবার শুক্র গ্রহে একটি দিন পৃথিবীর তুলনায় ২৪৩ দিনের সমান।


পরিশেষে 

পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে সকল  অজানা তথ্যই আমাদের কে সময়ে সুযোগে বিস্মিত করে। প্রতিদিনের জীবনে আমরা হয়তো এসব বিষয় নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তবে মহাবিশ্বের সব তথ্যগুলোই আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়—আমরা কতোটা সৌভাগ্যবান যে এই বিস্ময়কর পৃথিবীতেও আমরা টিকে আছি।  বাস করছি।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন