ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে সরকার। গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ কমিটির তত্ত্বাবধানে চলা সমীক্ষা, মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক কাজের পর এখন শুধু অপেক্ষা নাম চূড়ান্ত হওয়ার। আজ ১৫ মার্চ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সভায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পাঁচটি প্রস্তাবিত নামের মধ্যে দুটির প্রতি বেশি সমর্থন দেখিয়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ। তবে অধিভুক্তির পর থেকে ঢাবি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কলেজগুলোতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠে। এর বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে সরব হন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত ডিসেম্বরে সরকার পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয় এবং একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে।
বিশেষ কমিটি গত তিন মাস ধরে কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা, পৃথকীকরণের রূপরেখা প্রণয়ন এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের প্রস্তাব আহ্বান করে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আগ্রহী ব্যক্তিরা info@ugc.gov.bd ঠিকানায় ই-মেইলের মাধ্যমে নাম জমা দেন। আজ ইউজিসির সভায় এই নাম চূড়ান্ত করা হবে। সভায় অংশ নেবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কমিটির সদস্য ও ছাত্র নেতারা।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি নাম হলো—‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ এবং ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামগুলোও আলোচনায় রয়েছে। অনেকের মতে, নামটি যেন রাজধানীর ঐতিহ্য ও জাতীয় পরিচয়কে ধারণ করে।
ঢাকা কলেজের ছাত্র আব্দুর রহমান, যিনি এই আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র, বলেন, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হব। এখানে আধুনিক গবেষণা, যুগান্তকারী পাঠ্যক্রম ও আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা পাবেন শিক্ষার্থীরা।”
ইডেন মহিলা কলেজের সুমাইয়া মীম যোগ করেন, “নামটি এমন হতে হবে, যা আমাদের গৌরবময় ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। এটি শুধু ঢাকার নয়, গোটা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠুক।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাকালীন কলেজগুলোর প্রশাসনিক জটিলতা, গবেষণার অভাব এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন বাড়বে, বরাদ্দ বাড়বে অর্থ ও সম্পদের। পাশাপাশি, ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।
নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইনি প্রক্রিয়া, অ্যাকাডেমিক কাঠামো নির্ধারণ এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. নাজমুল হক বলেন, রাজধানীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এটি গবেষণা ও নবীন উদ্ভাবনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন