পাকিস্তানের সেনানিবাসে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা, নিহত ২১

Dhaka news, dhaknews, banglanews, bagla news, ajker news, Latest News, Bangladesh News, Breaking News, Business, Cricket, ঢাক নিউজ, ঢাকার খবর, আজকের খবর, আজকের তাজা খবর, ব্রেকিং নিউজ, dhakapost, আজকের খবর, আজকের সংবাদ


ইসলামাবাদ, ৫ মার্চ: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলার একটি সেনানিবাসে ভয়াবহ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন হামলাকারীসহ মোট ২১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬ জন হামলাকারী এবং ১৫ জন সাধারণ নাগরিক, যাদের মধ্যে ৪ শিশু ও ২ জন নারী রয়েছেন।

পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিহত ৬ হামলাকারীই টিটিপির সদস্য ছিলেন বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক সেনা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার মুহূর্তে বিস্ফোরকবোঝাই দুটি গাড়ি সেনানিবাসের ভেতরে প্রবেশ করে এবং মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, এর ধাক্কায় আশপাশের একটি মসজিদ ও একটি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ে।

হামলার পরপরই সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের মুখপাত্র জানান, নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই বেসামরিক নাগরিক, আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই হামলার আগের দিন সোমবার, খাইবার পাখতুনখোয়ার একটি মাদ্রাসায় আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছিল। সেই হামলায় স্থানীয় এক শীর্ষ তালেবান নেতাসহ ৬ জন নিহত হন।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল ছিল দেশটির জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে ১,৬০০-এর বেশি মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৮৫ জনই ছিলেন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্য।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তালেবানপন্থী গোষ্ঠী টিটিপি ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন এসব হামলার জন্য দায়ী। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপিকে গোপনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত বছর জুলাই মাসে, টিটিপির অন্যতম সহযোগী হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের একটি সেনা ছাউনিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায়। সেই হামলায় ৮ জন সেনা সদস্য ও ১০ জন সন্ত্রাসী নিহত হন।

পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী টিটিপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এখনো তারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। দেশটির সীমান্ত অঞ্চলে তালেবানপন্থী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম রোধে নতুন কৌশল নিয়ে ভাবছে ইসলামাবাদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিটিপি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান হামলা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে।

সাম্প্রতিক এসব হামলার পর পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশজুড়ে উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা, সামরিক অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছে। তবে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন