বাবাকে ছেলে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়

বাবাকে ছেলে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়


জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় পিতৃহত্যার মর্মান্তিক ঘটনায় তদন্তে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। ছেলে শাহিন মণ্ডলের (৩০) স্বীকারোক্তির পর পুলিশ এখন প্রমাণ জোগাড়ে ব্যস্ত। গত বছর ডিসেম্বরে পুকুরে প্রহরী রজব আলীর (৫৫) মৃত্যুকে প্রথমে দুর্ঘটনা ভাবলেও পুলিশের তদন্তে তা হত্যাকাাণ্ড বলে প্রমাণিত হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের অফিস থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।


রজব আলী কালাই উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। পাশের বলিগ্রামে সাখাওয়াত হোসেনের পুকুরে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন তিনি। গত ২২ ডিসেম্বর সকালে পুকুরে তার মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। কালাই থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হলেও তদন্তে ধীরে ধীরে হত্যার চিহ্ন খুঁজে পান তদন্তকারীরা।


ময়নাতদন্ত রিপোর্টে রজব আলীর মৃত্যুকে 'হত্যা' বলে চিহ্নিত করা হয়। কালাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার জানান, পুকুর পাড় থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে মাটিতে রক্তের দাগ এবং লাশের নাক ও কপালে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা হয়, তাকে জোর করে পুকুরে ফেলা হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রজব আলীর স্ত্রী ছেলে শাহিনের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের করেন। এরপর শাহিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


শাহিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে তিনি বাবাকে হত্যা করেছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাহিন অতীতে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল দীর্ঘদিন। একপর্যায়ে রজব আলী শাহিনকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। প্রায় ১৫ বছর পর শাহিন বাড়ি ফিরে আর্থিক সহায়তা চাইলে বাবা রাজি হননি। এই নিয়ে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার এক রাতে শাহিন বাবাকে পুকুরের পাড়ে নিয়ে গিয়ে আঘাত করে পানিতে ফেলে দেন।

শাহিনকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু স্বীকারোক্তির ওপর ভরসা করে মামলা চালানো যাবে না। প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতের রায়ই চূড়ান্ত হবে। তদন্তকারী আব্দুল জব্বার বলেন, "মেডিকেল রিপোর্ট, সাক্ষী এবং ফরেনসিক প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। শাহিনের বিরুদ্ধে শক্ত মামলা গড়ে তোলা হবে।"

ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। রজব আলীর প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম বলেন, "তিনি খুবই সরল মানুষ ছিলেন। ছেলের অপরাধী জীবন নিয়ে সবসময় দুঃখ করতেন। কিন্তু এভাবে প্রাণ যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি।" অনেকেই পুলিশের তদন্তের গতিকে ইতিবাচক দেখছেন।

এই হত্যাকাাণ্ড সামাজিকভাবে পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা ফুটিয়ে তুলেছে। মানবাধিকার কর্মী ফারহানা আক্তার বলেন, "পরিবারে সংঘাত সমাধানের জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আইনের পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।"


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন