ফরিদপুর সদর উপজেলার শিবরামপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রোববার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তরমুজবাহী একটি ট্রাক, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী নয়ন শেখ (২২) ও রিকশাচালক মো. শাহজাহান (৫১)। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, দুর্ঘটনাস্থলে ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ীগামী তরমুজবাহী ট্রাকটি ফরিদপুর থেকে রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এরপর ট্রাকটি বিপরীত দিকের লেনে ঢুকে যায় এবং একটি মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ধাক্কা মারে। ধাক্কার তীব্রতায় মোটরসাইকেল আরোহী নয়ন শেখ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে, রিকশাচালক শাহজাহানকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।
নয়ন শেখ ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং সকালবেলা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। অন্যজন মো. শাহজাহান একই ইউনিয়নের মদনদিয়া গ্রামের রিকশাচালক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য শাহজাহানের মৃত্যুতে তার পরিবার চরম দুর্দশায় পড়েছে বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, "এই মহাসড়কে গত কয়েক মাসে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।" তার মতে, ট্রাক চালকদের বেপরোয়া গতি এবং লাইনের নিয়ম না মানাই এ ধরনের ঘটনার মূল কারণ।
দুর্ঘটনার পর থেকেই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করে। ট্রাক চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে করিমপুর হাইওয়ে থানা। ওসি সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, "ট্রাক চালকের অসতর্কতাই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছি।"
এদিকে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুমাইয়া আক্তার জানান, শাহজাহানকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার মস্তিষ্কে মারাত্মক রক্তক্ষরণ ও বহু অস্থি ভেঙে গিয়েছিল। "এত জটিল আঘাত নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না," তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হলেও এ ধরনের মৃত্যু এখনও সমাজকে নাড়া দেয়। ফরিদপুরের এই ঘটনাটি পুনরাই প্রশ্ন তুলেছে যানবাহনের ফিটনেস, চালকের দক্ষতা ও ট্রাফিক আইন প্রয়োগের দুর্বলতা নিয়ে। গত বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ফরিদপুর জেলাতেই গড়ে মাসে ১০-১২টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ক্যামেরা স্থাপন এবং আইন ভঙ্গকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
দুর্ঘটনার শিকার দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় জনগণ ও সামাজিক সংগঠনগুলো। ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, "নয়নের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া শাহজাহানের সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।" স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন